আইডিবি ভোকেশনাল ট্রেনিং স্কলারশিপ: যখন জীবনের কঠিন সময় আসে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়, তখন অনেক সম্ভাবনাময় তরুণের স্বপ্ন ভেঙে যায়। কিন্তু ভাগ্য সবসময় দরজা বন্ধ করে রাখে না। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-বাংলাদেশ ইসলামিক সলিডারিটি এডুকেশন ওয়াক্ফ (আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ) ঠিক এই মুহূর্তেই এমন এক আশার আলো নিয়ে এসেছে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক অসচ্ছল মুসলিম যুবকদের জন্য বিনামূল্যে ভোকেশনাল ট্রেনিং বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছে।
আইডিবি ভোকেশনাল ট্রেনিং স্কলারশিপ
আপনি যদি এমন একজন হন যার পড়ালেখা থেমে গেছে কিন্তু জীবনে বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখেন, তাহলে এই প্রোগ্রামটি আপনার জন্য একটি দারুণ সুযোগ হতে পারে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপনি শুধু একটি সার্টিফিকেটই পাবেন না, বরং এমন কিছু ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করবেন যা আপনাকে একটি সম্মানজনক চাকরি পেতে সাহায্য করবে।
এই প্রোগ্রামে আপনি যা যা শিখতে পারবেন
- ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস: আধুনিক ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট এবং ওয়্যারিং সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান।
- ইলেকট্রনিকস: ইলেকট্রনিক ডিভাইস মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দক্ষতা।
- রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ার কন্ডিশনিং: রেফ্রিজারেটর ও এসি মেরামত করার বিশেষ প্রশিক্ষণ।
- ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন: ওয়েল্ডিং এবং ধাতব কাজ করার কারিগরি দক্ষতা।
- মেশিনিস্ট: আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে কাজ করার প্রশিক্ষণ।
আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ ভোকেশনাল স্কলারশিপের মূল সুবিধা
এই স্কলারশিপ শুধু একটি কারিগরি কোর্স নয়, বরং জীবন বদলে দেওয়ার একটি সুযোগ। আর্থিক অনটনে থাকা একজন শিক্ষার্থীর জন্য এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা সহজে অনুমেয়।
- সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ: ছয় মাস মেয়াদি এই কারিগরি প্রশিক্ষণটি সম্পূর্ণ বিনা খরচে গ্রহণ করতে পারবেন।
- থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা: প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে থাকা-খাওয়ার সব খরচ কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
- মাসিক হাতখরচ: প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে হাতখরচ দেওয়া হবে, যা একজন শিক্ষার্থীর ছোটখাটো প্রয়োজনে কাজে আসবে।
- চাকরি পেতে সহায়তা: কোর্স শেষে আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ চাকরি পেতে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। এখন পর্যন্ত ১,৭৪১ জন প্রশিক্ষণার্থী ২৪৮টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।
আবেদনের যোগ্যতা ও শর্তাবলী
আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ এর এই স্কলারশিপে আবেদন করার আগে অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করা আপনার জন্য জরুরি।
- ধর্ম ও সামাজিক অবস্থান: আবেদনকারীকে অবশ্যই একজন সুবিধাবঞ্চিত মুসলিম প্রার্থী হতে হবে।
- শিক্ষাগত যোগ্যতা: সর্বনিম্ন অষ্টম শ্রেণি এবং সর্বোচ্চ এসএসসি পাস প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
- বয়সসীমা: প্রার্থীর বয়স ১৮ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- অধ্যয়নরত অবস্থা: বর্তমানে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত (অনার্স, মাস্টার্স বা ডিপ্লোমা) প্রার্থীরা এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
আবেদন প্রক্রিয়া: ধাপে ধাপে নির্দেশিকা
আবেদন প্রক্রিয়াটি সহজ, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করা আবশ্যক।
- অনলাইন আবেদন: আগ্রহী প্রার্থীদের নির্ধারিত অনলাইন লিংকে গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
- তথ্য প্রদান: আবেদন ফরমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা (জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফল, রোল নম্বর ও পাশের সাল) সঠিকভাবে প্রদান করুন।
- যোগাযোগের তথ্য: আপনার সচল মোবাইল নম্বর এবং তা যাচাই করার জন্য দ্বিতীয়বার সেটি পূরণ করুন।
- ছবি আপলোড: আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবি আপলোড করুন।
- প্রবেশপত্র প্রিন্ট: ফরম সাবমিট করার পর প্রবেশপত্র প্রিন্ট করে নিন। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় এটি অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।
আপনার যদি এই স্কলারশিপ নিয়ে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে [https://isdb-bisew.org/apply] এই লিংকে ক্লিক করে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
জীবনে বড় হতে হলে শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় কাজ হয় না, বাস্তবসম্মত দক্ষতারও প্রয়োজন। আইডিবি-বিআইএসইডব্লিউ-এর এই ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রোগ্রামটি সেই সুযোগই করে দিচ্ছে। যারা আর্থিক দুর্বলতার কারণে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের পথে আটকে আছেন, তাদের জন্য এটি এক অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম। তাই দেরি না করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করুন এবং জীবনের নতুন এক দিগন্তে পা রাখুন। আপনার মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে আপনিও হতে পারেন একজন সফল পেশাজীবী।
সূত্র: https://isdb-bisew.org
আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি বিএড কলেজ: ভর্তি, খরচ ও পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন
1 thought on “আইডিবি ভোকেশনাল ট্রেনিং স্কলারশিপ: আবেদন, যোগ্যতা ও সুযোগ-সুবিধা”